অতীত হওয়ার পথে পরিযায়ী পাখিরা, নিতে হবে উদ্যোগ

অতীত হওয়ার পথে পরিযায়ী পাখিরা, নিতে হবে উদ্যোগ

অতীত হওয়ার পথে পরিযায়ী পাখিরা, নিতে হবে উদ্যোগ

ইমরান হোসাইন

ষড়ঋতুর এ দেশে শীত আসে উৎসবের আমেজ নিয়ে। প্রকৃতির এমন বৈচিত্র্যময় উৎসবটা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে একটু বেশিই। শীতের শুরুতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকগুলোতে আসতে শুরু করে হাজার হাজার অতিথি পাখি। ভোরের আলোয় অতিথি পাখির কলকাকলিতে ঘুম ভাঙে শিক্ষার্থীদের। রক্ত লাল শাপলার সৌন্দর্যে মন মাতানো রূপ ও অতিথি পাখির আনাগোনায় মুখরিত হয় ক্যাম্পাস।

অতিথি পাখি আসে কেন?

নিজ অঞ্চলের শীত সহ্য করতে না পেরে যেখানে শীত অপেক্ষাকৃত কম সেখানে অতিথি পাখিরা চলে আসে। তাছাড়া এ সময় শীতপ্রধান এলাকায় খাবারেরও প্রচুর অভাব থাকে। শীতপ্রধান এলাকায় তাপমাত্রা থাকে অধিকাংশ সময় শূন্যেরও বেশ নিচে। সেইসঙ্গে রয়েছে তুষারপাত। তাই কোনো গাছপালা জন্মাতেও পারে না। শীত এলেই উত্তর মেরু, সাইবেরিয়া, ইউরোপ, এশিয়ার কিছু অঞ্চল, হিমালয়ের আশপাশের কিছু অঞ্চল থেকে পাখিরা ঝাঁকে ঝাঁকে আসতে থাকে কম ঠান্ডা অঞ্চলে। বসন্ত মানে মার্চ-এপ্রিলে শীতপ্রধান অঞ্চলে বরফ গলতে শুরু করে, গাছপালা জন্মায় কিছু কিছু। ঘুম ভাঙতে শুরু করে পুরো শীতকালে ঘুমিয়ে থাকা অনেক প্রাণীর। ঠিক এ রকম সময়ে অতিথি পাখিরা নিজ বাড়িতে ফিরে যায় দলবলসহ। আবার এখানে খুব মজার একটা ব্যাপার আছে। তারা ফিরে গিয়ে ঠিক তাদের বাড়ি চিনে নেয়।

দেশের যে-সকল অঞ্চলে অতিথি পাখি আসে

আন্তর্জাতিকভাবে জলচর পাখির জন্য স্বীকৃত ২৮টি জায়গা বাংলাদেশের সীমানায় রয়েছে। এগুলো হলো : বরিশাল বিভাগের চর বারি, চর বাঙ্গের, কালকিনির চর, চর শাহজালাল, টাগরার চর, ডবা চর, গাগোরিয়া চর, চর গাজীপুর, কালুপুর চর, চর মনপুরা, পাতার চর ও উড়ির চর; চট্টগ্রাম বিভাগের চর বারী, বাটা চর, গাউসিয়ার চর, মৌলভীর চর, মুহুরি ড্যাম, মুক্তারিয়া চর, ঢাল চর, নিঝুম দ্বীপ, পতেঙ্গা সৈকত, সোনাদিয়া ও মহেশখালী দ্বীপ; সিলেট বিভাগের আইলার বিল, ছাতিধরা বিল, হাইল হাওর বাইক্কা, হাকালুকি হাওর, পানা বিল, রোয়া বিল, শনির বিল ও টাঙ্গুয়ার হাওর। এছাড়াও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা আশেপাশে কয়েকটি জলাশয়ে অতিথি পাখি আসে। জাবি ক্যাম্পাস নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চল, লেকগুলো খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ ও নিরাপদ আশ্রয়স্থল হওয়ায় অতিথি পাখিরা এখানে অবস্থান করে। শীত এলেই এসব জলাশয়সহ বিভিন্ন হাওর, বাঁওড়, বিল ও পুকুরের পাড়ে চোখে পড়ে নানান রং-বেরঙের পাখির।

‘অতিথি পাখি নাকি পরিযায়ী পাখি’

এমন প্রশ্নের জবাবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও পাখি গবেষক ড. মোহাম্মদ মনিরুল হাসান খান বলেন, ‘ভ্রমণকারী পাখিদের পরিযায়ী বলা হয়। তারা অতিথি পাখি নয়। অতিথি মানে হলো বেড়াতে আসা। অতিথিরা ইচ্ছা হলে আসতে পারে, আবার নাও আসতে পারে। কিন্তু এই পাখিরা গ্রীষ্মকালে এক জায়গায়, আর শীতকালে আরেক জায়গায় কাটায়। শীত ও গ্রীষ্মপ্রধান উভয় দেশের বাসিন্দা এরা। তাদের জীবনযাপনের জন্য দুটো জায়গাই আবশ্যকীয়। ‘কনভেনশন অব মাইগ্রেশন স্পিচেস’ অনুযায়ী তারা যেখানে থাকে ও যেখান দিয়ে উড়ে যায়, তারা সেখানেরও বাসিন্দা। তাই অতিথি বললে মানুষের কাছে ভুল বার্তা পৌঁছায়।’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিযায়ী পাখি

১৯৮৬ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম অতিথি পাখি আসতে শুরু করে। ২০১৪ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে পরিযায়ী পাখিদের অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করে সরকার। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছোট-বড় মিলিয়ে ২৬টি লেক রয়েছে। প্রায় ২০৬ প্রজাতির অতিথি পাখির দেখা পাওয়া যায় জাবি ক্যাম্পাসে। এর ১২৬ প্রজাতির দেশীয়, বাকি ৮০টি বিদেশি প্রজাতির। সাধারণত সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাস থেকে পাখিরা ক্যাম্পাসের লেকগুলোতে আসতে শুরু করে। তবে ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সংখ্যক পাখি দেখা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের আগত অতিথি পাখিদের অধিকাংশই হাঁসজাতীয়। এর মধ্যে পাতিসরালি, পান্তামুখী, মুরগ্যাধি, গার্গেনি, কোম্বডাক, পাতারি, পচার্ড, ছোট জিরিয়া, পাতারী হাঁস, জলকুক্কুট, খয়রা ও ফ্লাইকেচার প্রধান। এছাড়া কলাই, ছোট নগ, লাল গুড়গুটি, নর্দানপিনটেল, কাস্তে চাড়া, জলপিপি, মানিকজোড়, খঞ্জনা, লাল গুড়গুটি, নর্দানপিনটেল, চিতাটুপি, বামুনিয়া হাঁস, নাকতা, ও কাস্তে চাড়া প্রভৃতি নামের হাজার হাজার পাখি দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে আসে এই ক্যাম্পাসে।

পাতি সরালি দেশীয় পাখি, এরা অতিথি নয়

বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রখ্যাত পাখি গবেষক ইনাম আল হকের মতে, পাতি সরালি আসলে কখনই পরিযায়ী পাখি নয়। জাহাঙ্গীরনগরে পরিযায়ী পাখি এসেছে এসব কথা বলে যে পাখি দেখা যায় সেটা হলো পাতি সরালি। তিনি বলেন, এই পাখিটা সারাবছরই আমাদের দেশে থাকে। তবে সারাবছর এক জায়গায় থাকে না। গ্রীষ্মে বিল-ডোবাসমৃদ্ধ বিভিন্ন ধানক্ষেতে ছড়িয়ে থাকে। কিন্তু শীতের সময় তো সেই বিল-ডোবা শুকিয়ে যায়; ধানক্ষেত্রে তো আর পানি থাকে না; তাই তার পানিযুক্ত বড় বড় হাওর বিলে চলে আসে।

জাহাঙ্গীরনগরে কমতে শুরু করছে পরিযায়ীরা

সম্প্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকগুলো বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ায় বিগত কয়েকবছর ধরে পরিযায়ী পাখি কম আসছে। তার ধারাবাহিকতা বজায় রয়েছ এবছরও। এবছর শুধু একটি জলাশয়ে পাখি রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়াইল্ড লাইফ রেসকিউ সেন্টারের অভ্যন্তরের জলাশয়টি সাধারণের প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত বলে সেখানে পাখি আছে। ক্যাম্পাসে দর্শনার্থীর চাপ বাড়ায় ও বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদের উৎপাতে পাখি কমেছে বলে জানিয়েছেন পাখি বিশেষজ্ঞরা।জাহাঙ্গীরনগরে হারিয়ে যাওয়া পথে যেসব পাখিবন্যপ্রাণী আলোকচিত্রী অরিত্র সাত্তার বলেন, ক্যাম্পাসের পাখির ছবি তুলতে গিয়ে কয়েক বছর ধরে নির্দিষ্ট কিছু প্রজাতিকে কম দেখতে পাচ্ছি। কোন কোন প্রজাতি আবার একদম যেন হারিয়েই গিয়েছে । সাম্প্রতিক জাহাঙ্গীরনগর থেকে দেশীয় প্রজাতির মধ্যে বাংলা ঝাড় ভরত, ভোমরা ছোটন, বাবুই পাখি, ল্যাঞ্জা রাতচরা, কালো-ঘাড় রাজন, পাকড়া মাছরাঙা, মেটেবুক প্রিনা, নিরল প্রিনা, ভুতুম প্যাঁচা, খয়রা শিকরে প্যাঁচা, লক্ষ্মী প্যাঁচা হারিয়ে যাচ্ছে। পরিযায়ী পাখিদের মধ্যে সাইবেরীয় শিলাফিদ্দা, হলদেগাল টিটি, ধূপনি বক, খঞ্জনা, মেটে খঞ্জনা, রাজ সরালি, জিরিয়া হাঁস, পাতি তিলি হাঁস, গয়ার, শামুক খোল, হুদহুদ, খয়রা কাঠঠোকরা, পাতি ক্যাস্ট্রেল, লম্বাপা তিসাবাজ, ধলাচোখ-তিসাবাজ, কালচে ফটক, সবুজ চাঁদি ফটক, ধূসর-মাথা হট্টিটি, মেঠো কুড়ালি উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে।

দেশে হারিয়ে যাওয়া পাখিরা

বাংরাদেশ সরকারের বন বিভাগ এবং প্রকৃতি সংরক্ষণ-বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন) তালিকা অনুযায়ী লালমুখ দাগিডানা, ধূসর মেটে তিতির, বাদা তিতির, বাদি হাঁস, গোলাপি হাঁস, বড় হাড়গিলা বা মদনটাক, ধলাপেট বগ, রাজ শকুন, লালমাথা টিয়াঠুঁটি, সবুজ ময়ূর, দাগি বুক টিয়াঠুঁটি, গাছ আঁচড়া, সাদাফোঁটা গগন রেড পাখি এ দেশ থেকে হারিয়ে গেছে।

অপরিকল্পিত উন্নয়নে বিপন্ন প্রাণ-প্রকৃতি

অপরিকল্পিত উন্নয়নে জাহাঙ্গীরনগরের প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। ফলে আশংকাজনক হারে পরিযায়ী পাখি না আশার কারণ হিসেবে অপরিকল্পিত অবকাঠামো নির্মাণ, সময়মতো লেকগুলো সংস্কার না করা, গাছ কাটা, লেক ইজারা দেওয়া, বহিরাগতদের উৎপাতসহ নানা অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। সূত্র জানায়, জাবিতে বর্তমানে মাস্টারপ্ল্যানের আওতায় ২৩টি প্রকল্পের কাজ চলছে। অনেকগুলো প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে, অনেকগুলো আবার চলমান। এসব প্রকল্পের কাজ করতে গিয়ে অনেক গাছ কাটা পড়েছে, পাখির ফ্লাইং জোনে বড় বড় ভবন তৈরি, যা পাখির জন্য বড় হুমকি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, অপরিকল্পিত উন্নয়ন, বহিরাগতদের অবাধে বিচরণ, যানবাহনের উচ্চ শব্দ ইত্যাদি কারণে আজকাল লেকগুলোতে পরিযায়ী পাখি কম দেখা যায়।এদিকে উৎপাত ও অব্যবস্থাপনায় বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে পার্শ্ববর্তী এলাকায় অবস্থান নিয়েও স্বস্তিতে নেই পরিযায়ী পাখিরা। সেসব এলাকায় শিকারিদের বিরুদ্ধে গুলতি ব্যবহার করে এবং জাল দিয়ে ফাঁদ তৈরি করে পরিযায়ী পাখি শিকারের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের সত্যতা খুঁজতে গিয়ে পাখি বিশেষজ্ঞ ও বন্যপ্রাণী আলোকচিত্রীদের থেকে পাওয়া ভিডিও ও ছবিতে অভিযোগের সত্যতা মিলেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উৎপাতে পরিযায়ী পাখিরা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে পার্শ্ববর্তী একটি গবেষণা ইনস্টিটিউট, গেরুয়া ও সাভারের কয়েকটি জলাশয়ে অবস্থান নেয়। তবে এসব জায়গায় পরিযায়ী পাখি রক্ষায় কোন ধরনের সচেতনতা ও নজরদারি না থাকার সুযোগে এসব পাখি শিকার করছেন শিকারিরা। জলাশয়গুলোর অবস্থা আগেরদিন বিকালে একরকম থাকলেও শিকারিদের উৎপাতে পরেরদিন সকালে অন্যরকম হয়। পাখি বিশেষজ্ঞ ও বন্যপ্রাণী আলোকচিত্রীদের মতে, ‘সকালে জলাশয়গুলোর চিত্র দেখলে মনে হয়, এখানে রাতে গোপনে পরিযায়ী পাখি ধরার মহোৎসব চলেছে।’

বন্যপ্রাণী আলোকচিত্রী অরিত্র সাত্তার বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সবসময় বিভিন্ন অনুষ্ঠান চলে, তবে পাখিদের সমস্যা হয়। কিন্তু এবার কয়েকটি অনুষ্ঠানে মাত্রাতিরিক্ত উচ্চ শব্দ করা হয়। এতে পাখিরা বিরক্ত হয়ে ক্যাম্পাস ছেড়ে পার্শ্ববর্তী এলাকায় অবস্থান নেয়। যেহেতু ক্যাম্পাসে রাতে অনেকে মাছ ধরে, সেহেতু পাখি ধরার সম্ভাবনা রয়েছে। এর প্রেক্ষিতে পাখিরা বিরক্ত হয়ে চলে গিয়েছিল।

পাখি বিশেষজ্ঞ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মো. কামরুল হাসান বলেন, ‘গত দুই-তিন বছর দর্শনার্থীর উৎপাত কম থাকায় পরিযায়ী পাখি বেশি সংখ্যায় এসেছিল। তবে এ বছর বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শনার্থীদের যাতায়াত বেশি ছিল। ফলে তাদের উৎপাতে পরিযায়ী পাখি কমতে পারে।’

বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ মনিরুল হাসান খান বলেন, উত্ত্যক্ত হওয়ায় পাখি চলে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে রাত্রিকালীন কিছু অনুষ্ঠানে আতশবাজি ও পটকা ফুটানো এবং সাউন্ড সিস্টেমের ব্যবহারে পাখিরা বিরক্ত হয়েছে বলে মনে করছি। তবে এ বছর ক্যাম্পাসের জলাশয়গুলোতে ছোট সরালি ও বড় সরালির পাশাপাশি আরও এক প্রজাতির পাখি দেখা গিয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

পাখি রক্ষায় নিতে হবে ব্যাপক উদ্যোগ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও পাখি গবেষক ড. মোহাম্মদ মনিরুল হাসান খানের মতে, ‘পাখি ও প্রকৃতি একে অপরের পরিপূরক। অতিথি পাখি বিভিন্ন বৃক্ষের বীজ বহন করে নিয়ে আসে দেশে । ফলে জঙ্গলে নতুন নতুন বৃক্ষ জন্মাতে দেখা যায়। বিভিন্ন পোকামাকড় খেয়ে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে পাখি। এজন্য পাখির আবাসস্থলগুলো রক্ষা করতে হবে। তাদের অনুকূল পরিবেশের জন্য ক্যাম্পাসের লেকগুলো খনন করতে হবে। যখন পরিযায়ী পাখিরা থাকে না, সেই মৌসুমে লেক ব্যবস্থাপনার কিছু উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। সর্বোপরি প্রাকৃতিক পরিবেশ ঠিক রাখতে হবে। মানবসৃষ্ট ডিস্টার্বেন্স বন্ধ করার পাশাপাশি ভিজিটরদের নিয়মনীতির মধ্যে আনতে হবে।’

অতিথি পাখি শুধু জলাশয়ের অপরূপ সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে না, আমাদের উপকারও করে। ফসলের জন্য ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ খেয়ে অতিথি পাখি কৃষককে সহায়তা করে। মানুষের মনের খোরাক বৃদ্ধি ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় অতিথি পাখির অবদান রয়েছে। যে দেশে পাখি বেশি, সে দেশে পর্যটকের সংখ্যাও বেশি। অতিথি পাখি প্রকৃতি-পরিবেশের বন্ধু । তাদের রক্ষায় ব্যাপক উদ্যোগ নিতে হবে। নতুবা অচিরেই প্রাণ প্রকৃতি ধ্বংস হয়ে যাবে এমনটা বলেছেন বিশেষজ্ঞরা।

পাখি রক্ষায় কৃত্রিম পাখির বাসা নির্মাণ

উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপীয় অঞ্চলে কৃত্রিম বাসায় পাখির পরজীবিতা নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে। তবে বাংলাদেশে এ ধরনের গবেষণা এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক সাজেদা বেগম জানিয়েছেন, পিএইচডি-পরবর্তী পরীক্ষামূলক গবেষণাকাজের জন্য ক্যাম্পাসে ২০ থেকে ৩০টি আর্টিফিশিয়াল নেস্ট বা পাখির কৃত্রিম বাসা বিভিন্ন রাস্তার পাশের গাছে লাগানো হয়েছে। মূলত ‘পাখির পরজীবিতা’ বিষয়ক গবেষণার জন্য ২০২২ সালের শুরু থেকে এগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা জানান, বৈশাখ মাস থেকে এসব পাখি, বিশেষ করে ঝুঁটি শালিক, ভাত শালিক, দোয়েল, কুটুরে প্যাঁচা, কাঠ শালিক, চড়ুই পাখিরা প্রজনন ঘটায়। এই সময় পাখিদের বাসা বাঁধার জন্য নির্দিষ্ট জায়গার প্রয়োজন হয়। সেগুলোর মধ্যে আছে বড়সড় গাছের কোটর, নারকেল গাছের ফোকরসহ পুরোনো দালানের ভাঙা ভেন্টিলেটর ইত্যাদি। যেহেতু এসব জায়গা বর্তমানে অপ্রতুল হয়ে উঠেছে, তাই প্রয়োজনের তাগিদে দরকার পড়ছে কৃত্রিম বাসার।

অধ্যাপক সাজেদা বেগম জানান, বাংলাদেশে কোকিল পাখির পরজীবিতা নিয়ে এর আগে গবেষণা হয়নি। তিনিই প্রথমে সেটি শুরু করেছেন। বাংলাদেশে সাধারণত ১৫ প্রজাতির কোকিল আছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫ প্রজাতির কোকিল নিয়মিত দেখা যায়। কোকিল মূলত কাক, শালিক ও কসাই পাখির বাসা ব্যবহার করে ডিম দেয় এবং বাচ্চা ফোটায়। এই গবেষণায় আর্টিফিশিয়াল নেস্টে কোকিলের ডিম ফোটানোর বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। গবেষণা শেষে প্রয়োজন অনুসারে আর্টিফিশিয়াল নেস্টগুলো সরিয়ে নেওয়া হবে।

পাখি রক্ষায় সচেতনতামূলক ‘পাখি মেলা’

পাখি সংরক্ষণে গণসচেতনতা বাড়াতে ২০০১ সাল থেকে নিয়মিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পাখি মেলার আয়োজন করা হচ্ছে। ‘পাখপাখালি দেশের রত্ন, আসুন করি সবাই যত্ন’ স্লোগান নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের আয়োজনে দিনব্যাপী মেলা অনুষ্ঠিত হয়। সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য এই মেলা আয়োজন করা হয়। মেলায় বিভিন্ন আয়োজনের মধ্যে রয়েছে আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় পাখি দেখা প্রতিযোগিতা, পাখিবিষয়ক আলোকচিত্র প্রদর্শনী, শিশু-কিশোরদের পাখির ছবি আঁকা প্রতিযোগিতা, টেলিস্কোপ ও বাইনোকুলার দিয়ে শিশু-কিশোরদের পাখি পর্যবেক্ষণ প্রভৃতি। ‘মেলায় সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশের মাধ্যমে পাখি ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় অবদান রাখার জন্য ‘‘কনজারভেশন মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড’’, নতুন প্রজাতির পাখির ছবি ধারণ ও চিহ্নিত করার জন্য ‘‘বিগ বার্ড অ্যাওয়ার্ড’’ এবং পাখির ওপর সায়েন্টিফিক জার্নাল ও প্রকাশিত প্রবন্ধ পর্যালোচনা করে ‘‘সায়েন্টিফিক পাবলিকেশন অ্যাওয়ার্ড’’ দেওয়া হয়। ’ এরকম মেলা দেশের প্রতিটি অঞ্চলে করা উচিত বলে মনে করেন প্রকৃতিপ্রেমীরা।

বন্যপ্রাণী আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে হবে

শিকারি পাখি, আবাসস্থল ধ্বংস প্রভৃতিই পরিযায়ী পাখির প্রধান শত্রু। আমাদের দেশে প্রতিনিয়তই পরিযায়ী পাখির আবাসস্থল ধ্বংস হচ্ছে। একশ্রেণির লোভী, ব্যাধের নিষ্ঠুরতার শিকার হয়ে প্রাণ হারাচ্ছে অসংখ্য দুর্লভ প্রজাতির অতিথি পাখি। জালের ফাঁদ পেতে, বিষটোপ এবং ছররা গুলি দিয়ে নির্বিচারে ও নির্মমভাবে এসব অতিথি পাখি শিকার চলছে প্রতিনিয়ত। অতিথি পাখি নিধন এবং বাজারে বিক্রি নিষিদ্ধ জেনেও আইনের ফাঁক গলিয়ে এক শ্রেণির পেশাদার এবং শৌখিন শিকারি কাজগুলো করে চলেছে। ১৯৭৪ সালে বন্যপ্রাণী রক্ষা আইন ও ২০১২ সালে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনে দণ্ডের বিধান রয়েছে। পাখি হত্যা, মাংস, দেহের অংশ সংগ্রহ করা, শিকার ও এ জাতীয় অপরাধ সংঘটনে সহায়তা করা, প্ররোচনা প্রদান ইত্যাদি বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন-২০১২) অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আইন অমান্য করে পাখি শিকার করলে বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২-এর নবম অধ্যায়ের অপরাধ দন্ডবিভাগে (৩৮ ধারার উপধারা ১ ও ২) কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন ধর্মে পশু ও প্রাণিহত্যা চরম পাপের কাজ বলে বিবেচিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি চড়ুই বা তার চাইতে ছোট কোনো প্রাণীকে অযথা হত্যা করে, তাকে আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিন সে সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবেন।’ (নাসায়ি, হাদিস : ৪৩৪৯)।

বন সংরক্ষণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে

গাছ ছাড়া পাখি কল্পণা করাই সম্ভব নয়। পরিবেশ ভারসাম্য রক্ষায় মোট ভূমির ২৫ ভাগ বন থাকার প্রয়োজন হলেও বাংলাদেশে আছে এরচেয়ে অনেক কম। বনের গাছপালা কৃত্রিম ও প্রাকৃতিক কারণে বিলুপ্ত হওয়ায় বন্যপ্রাণী ও উদ্ভিদ আজ হুমকির মুখে। আইইউসিএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- বৈরী জলবায়ুর কারণে বাংলাদেশে ৬৩২ প্রজাতির পাখির মধ্যে ১২টি প্রজাতি বিলুপ্ত হয়েছে এবং ৩০ প্রজাতি বিলুপ্তির পথে। বিলুপ্তি ঠেকাতে বন সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিতে হবে।

আতশবাজি ও উচ্চ শব্দে আতঙ্কিত পাখিরা

গবেষণা বলছে, আতশবাজির বিকট শব্দ ও এর উজ্জ্বল আলোর কারণে পাখিরা আতঙ্কিত হয়। তাই বছরের অন্যান্য রাতের তুলনায় এই রাতে পাখিদের বাসস্থান ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার সম্ভাবনা এক হাজার গুণ বেশি। গবেষণাটি ফ্রন্টিয়ারস ইন ইকোলজি অ্যান্ড দি এনভায়রনমেন্ট জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, আতশবাজির বিকট শব্দ ও এর উজ্জ্বল আলোর কারণে পাখিরা আতঙ্কিত হয়। তাই বছরের অন্যান্য রাতের তুলনায় এই রাতে পাখিদের বাসস্থান ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার সম্ভাবনা এক হাজার গুণ বেশি। মার্কিন গণমাধ্যম স্যালন এ প্রতিবেদনটির শুরুতেই প্রশ্ন রেখেছে- ‘আতশবাজি ফোটানো ছাড়া নববর্ষ উদ্যাপনের কি আর অন্য কোনো উপায় নেই?’

নেদারল্যান্ডসের একদল গবেষক আবহাওয়া পর্যবেক্ষণের রাডার এবং পাখির সংখ্যার ওপর ভিত্তি করে গবেষণাটি চালিয়েছেন। তারা আতশবাজি ফোটানো এলাকাগুলোর সাথে নীরব বা শান্ত এলাকায় পাখিগুলোর গতিবিধি নিয়ে গবেষণা করেন। এতে তারা দেখতে পান, আতশবাজির শব্দ পাখিদের ওপর এক ধরনের বিরূপ প্রভাব ফেলে, যা কয়েকদিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।

যত্রতত্র আগুনে হুমকিতে জীববৈচিত্র্য

প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুমে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ঝোপঝাড় পরিষ্কার করার নামে আগুন দিয়ে পরিবেশ ধ্বংসের ফলে হুমকির মুখে ফেলা হয় ক্যাম্পাসের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ক্যাম্পাসের জঙ্গলগুলোতে সাপ, বেজি, শেয়াল, বিভিন্ন প্রজাতির পাখিসহ নানা ধরনের বন্য প্রাণীর বাসস্থান। কিন্তু প্রতি বছরই আগুনের কারণে প্রাণীদের খাবার ও বাসস্থানের সংকট সৃষ্টি হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে বড়ো বড়ো দালান তৈরি করতে গাছ কাটছে। কিন্তু এতে জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি হচ্ছে সেটা কেউ ভাবছে না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে এখনই সতর্ক হতে হবে না হলে অদূর ভবিষ্যতে এসব প্রাণী হারিয়ে যাবে।’

জাতীয় শিক্ষাক্রমে পাখি সচেতনতামুলক গল্প অর্ন্তভুক্তি

প্রাথমিক পর্যায়ে পাখি রক্ষায় সচেতনতামুলক গল্প শেখানোর রুপরেখা প্রণয়ন করতে হবে। ছোট বাচ্চাদের প্রাণ ও প্রকৃতি ধ্বংসের ফলে ক্ষতির দিকগুলো গল্পে গল্পে তুলে ধরতে হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে বাচ্চাদের মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তনের মাধ্যমে পাখি প্রেমী হিসেবে গড়ে তুলবে হবে।

সরকাবিভাবে পাখি গবেষণায় পৃষ্টপোষকতা বৃদ্ধি করা

প্রাণ ও প্রকৃতি নিয়ে গবেষণা বৃদ্ধিতে সরকারিভাবে পৃষ্টপোষকতা বৃদ্ধি করতে হবে। বিভিন্ন প্রবন্ধ, নিবন্ধ প্রকাশে সরকারি অর্থায়ন ফেলোশীপের আয়োজন করতে হবে। যারা পাখি নিয়ে কাজ করে তাদের সার্বিক সহযোগীতা করতে হবে। উন্নয়ন কর্মকান্ডে প্রকৃতিবিদদের পরার্শন নিতে হবে।

জাহাঙ্গীরনগরে পরিযায়ীদের নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিযায়ী পাখিদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে। নিরাপদ পরিবেশ তৈরিতে পুরাতন প্রশাসনিক ভবনের সামনের জলাশয় ও পরিবহণ চত্বরের পেছনের জলাশয়সংলগ্ন এলাকায় গাড়ি পার্কিং নিয়ন্ত্রণ, জলাশয়ের পাশে দোকানপাটে ভিড় কমানো ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আতশবাজি ও পটকা না ফুটানোর ওপর জোর দিয়েছেন দুই অধ্যাপক।

অধ্যাপক কামরুল হাসান বলেন, ‘প্রতিবছরই পরিবহণ চত্বরের পাশের জলাশয়ে অনেক বেশি পাখি আসে। তবে জলাশয়ের পাড়ের ঘেঁষেই গড়ে উঠেছে দোকানপাট। দোকানের পেছনের দিকে মানুষের ভিড় থাকে সবসময়। এই পরিযায়ী পাখিরা অল্পতেই ভয় পাই। তাই কোলাহল দেখে একরকম আতঙ্ক নিয়েই তারা চলে নির্জনে এলাকায় গিয়েছে।’

অধ্যাপক মোহাম্মদ মনিরুল হাসান খান বলেন, ‘পাখির জন্য নিরাপদ পরিবেশ রাখতে গাড়ি পার্কিং কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে রাত্রিকালীন অনুষ্ঠানে আতশবাজি ও পটকা ফুটানো এবং সাউন্ড সিস্টেমের ব্যবহার সীমিত করতে হবে। পাশাপাশি দর্শনার্থীরা যাতে পরিযায়ী পাখিদের উৎপাত না করে- সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

অন্যদিকে পরিযায়ী পাখির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি জলাশয় লিজমুক্ত রাখা হয় বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার আব্দুর রহমান। তিনি বলেন, ‘পাখিদের জন্য জলাশয় প্রস্তুত, রক্ষণাবেক্ষণ ও সচেতনতামূলক ব্যানার-ফেস্টুন তৈরি প্রভৃতি ক্ষেত্রে বছরে লক্ষাধিক টাকা ব্যয় হয়। পরিযায়ী পাখি বসার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি জলাশয় লিজ দেওয়া হয় না। এছাড়া পাখিদের উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিতে প্রতি বছর পুরাতন প্রশাসনিক ভবনের সামনের জলাশয় ও পরিবহণ চত্বরের পেছনের জলাশয়ের কচুরিপানা ও আবর্জনা পরিষ্কার করা হয়।’

লেখা: ইমরান হোসাইন, শিক্ষার্থী: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

ছবি: অরিত্র সাত্তার, শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *