সিনেট নির্বাচনে উপাচার্যের পক্ষপাতদুষ্ট কার্যক্রমে শিক্ষক ঐক্য পরিষদের ক্ষোভ

রাত পেরোলেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটে শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচন। অনেক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে দীর্ঘ আট বছর পর আগামীকাল অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ এ পর্ষদের নির্বাচন। সোমবার (১৬ অক্টোবর) সকাল সাড়ে নয়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ক্লাবে নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত চলবে। নির্বাচনে ৬১৩ জন শিক্ষক ভোট প্রদান করবেন। দুইটি প্যানেল থেকে ৩৩ জন করে ৬৬ জন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ২ জন শিক্ষক নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নূরুল আলমকে বিভিন্ন প্রচার প্রচারণা ও‌ নির্বাচনী কার্যক্রমে সরাসরি অংশ নিতে দেখা গেছে। রবিবার সকাল এগারোটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনের সেমিনার কক্ষে বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের প্যানেল‌ পরিচিতি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাবি উপাচার্য। এছাড়াও নির্বাচনকে ঘিরে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক, সহকারী অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপক ক্যাটাগরির শিক্ষকদের সাথে তিনি রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন বলে অভিযোগ আছে।

সিনেট নির্বাচনকেন্দ্রিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের এসব কর্মকাণ্ডকে ‘নির্বাচনী ফলাফলকে প্রভাবিত করতে উপাচার্যের পক্ষপাতদুষ্ট কার্যক্রম’ হিসেবে উল্লেখ করে তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থী ও আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের একাংশের প্যানেল ‘শিক্ষক ঐক্য পরিষদ’।

বিবৃতিতে তারা বলেন, আমরা মাননীয় উপাচার্যকে প্রো-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ মহোদয়বৃন্দের উপস্থিতিতে নির্বাচনে প্রশাসনকে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছিলাম। আমরা বলেছিলাম যে, প্রশাসনের ছত্রছায়ায় কোনো পক্ষ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে তা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনী চেতনার পরিপন্থী। মাননীয় উপাচার্য আমাদেরকে আশ্বস্ত করেছিলেন যে, নির্বাচনের কোনো পর্যায়েই প্রশাসন কোনো হস্তক্ষেপ করবে না। অত্যন্ত দুঃখের বিষয় এই যে, বিভিন্ন সামাজিক ও গণযোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত ছবি ও সংবাদ থেকে আমরা জেনেছি যে, মাননীয় উপাচার্য ও প্রো-উপাচার্যগণ এই নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী একটি প্যানেলের সমর্থনে প্রকাশ্যে সভায় উপস্থিত থেকেছেন, বক্তব্য দিয়েছেন ও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছেন। এ ধরণের পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ মহামান্য আচার্য কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সকলের অভিভাবকের দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধের সাথে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক। বিবেকের কাছে দায়বদ্ধ একজন অভিভাবক এরকম নৈতিকতা বিবর্জিত কাজ করতে পারেন না। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।

বিবৃতিতে তারা আরও বলেন, আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, পদের অপব্যবহার করে এই ধরণের প্রভাব বিস্তার উঁচু নৈতিকতার অধিকারী সহকর্মীগণের ব্যক্তিত্বকে আঘাত করার পাশাপাশি সামগ্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। আসন্ন সিনেট নির্বাচনে সম্মানিত সহকর্মীগণ তাঁদের ভোটের মাধ্যমে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে প্রগতিশীল নতুন দিনের অগ্রযাত্রার সূচনা করবেন এই প্রত্যাশা করছি।

এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নূরুল আলমের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *