ঢাকাস্থ বকশীগঞ্জ সমিতির মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত

সম্মানিত উপদেষ্টা পরিষদ, নির্বাহী পরিষদ এবং সকল আজীবন সদস্য নিয়ে ‘বকশীগঞ্জ সমিতি, ঢাকা’র মতবিনিময় সভা-২০২৩ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শনিবার (২৯ জুলাই) সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় রাজধানীর ধানমন্ডি সাতমসজিদ রোডে অবস্থিত ইম্পেরিয়াল আমিন সেন্টারের দি বাফেট স্টরিজ রেষ্টুরেন্টে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির আসন অলংকৃত করেন প্রাক্তন মন্ত্রী ও জামালপুর-১ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য জনাব আবুল কালাম আজাদ।‌ এসময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সমিতির উপদেষ্টা ও প্রাক্তন মন্ত্রী জনাব এম. এ. সাত্তার।

এসময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রাক্তন মন্ত্রী ও জামালপুর-১ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য জনাব আবুল কালাম আজাদ বলেন, সবাই যার যার অবস্থান থেকে সাহায্য করলে আমরা বকশীগঞ্জকে অনেক উপরে নিয়ে যেতে পারবো। বকশীগঞ্জের দরিদ্র ছেলে মেয়েদের আর্থিক সহায়তা অব্যাহত রাখা এবং দরিদ্র এমন কেউ এলাকায় আছে কিনা তা খুঁজে বের করার আহ্বান জানান।

তিনি আরও বলেন, বকশীগঞ্জে অনেক উন্নয়ন কাজ হয়েছেন। জমি না পাওয়ার কারণে অনেক সময় রাস্তা-ঘাটের উন্নয়ন ও নতুন রাস্তার কাজ করা সম্ভব হয়ে উঠেনা।

এসময় তিনি টেকনিক্যাল স্কুল খোলার বিষয়ে জায়গা খুঁজতে বলেন। মেধাবী ছাত্রদের সহায়তা, অসুস্থ ব্যক্তির সেবা করা, এতিম ও প্রতিবন্ধী শিশুদের সাহায্য করা, বিবাহযোগ্য মেয়েকে অর্থের অভাবে বিয়ে না দিতে পারলে সাহায্য করার আহ্বান জানান।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সমিতির উপদেষ্টা ও প্রাক্তন মন্ত্রী জনাব এম. এ. সাত্তার বলেন, বকশীগঞ্জ একটা ইউনিয়ন ছিল। সেই বকশীগঞ্জ ইউনিয়নকে আমি থানা ও পরবর্তীতে উপজেলা বানিয়েছি, এখন আমরা বকশীগঞ্জকে জেলা বানানোর স্বপ্ন দেখি। সত্যি কথা বলতে ১৯৮১ সাল থেকে আজ পর্যন্ত আমার মাথায় শুধু বকশীগঞ্জের চিন্তা থাকে।

এসময় তিনি বকশীগঞ্জের উন্নয়নে শহর বৃদ্ধির কথা জানান। শহরের বাইরে অবকাঠামো নির্মাণ করার আহ্বান জানান। শহরের সড়কগুলো প্রসস্থকরণ ও মূল শহরকে ঝামেলামুক্ত রাখতে শহরকে ঘিরে সার্কুলার রোড নির্মাণের প্রস্তাবনা দেন। ঢাকায় স্থায়ী ঠিকানার বিষয়ে সমিতির দায়িত্বপ্রাপ্তদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করেন। জামালপুর সমিতিতে নিজেদের অবস্থান জোড়ালো করার আহ্বান জানান।

মতবিনিময় সভার শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন সমিতির যুগ্ম মহাসচিব মো. শহিদুল্লাহ খান। এরপর দোয়া পরিচালনা করেন সমিতির নির্বাহী সদস্য ইঞ্জিনিয়ার গাজী মোঃ আলতাফুজ্জামান।

বকশীগঞ্জ সমিতির যুগ্ম মহাসচিব আনোয়ার হোসেন ফুয়াদের সঞ্চালনায় ও সমিতির সভাপতি আলহাজ্ব গাজী আমানুজ্জামানের সভাপতিত্বে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সমিতির সহ-সভাপতি ও মতবিনিময় সভার আহ্বায়ক ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. এম. আর করিম। এসময় তিনি উপস্থিত সবাইকে স্বাগত জানান। বকশীগঞ্জবাসীর মিলনমেলা এ সমিতিকে গতিশীল রাখার জন্য মতবিনিময় সভার মতো অনুষ্ঠানগুলোর প্রতি গুরুত্বারোপ করেন।

এরপর শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সমিতির মহাসচিব প্রকৌশলী বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ নজরুল ইসলাম। তিনি সবাইকে ধন্যবাদ দিয়ে বক্তব্য শুরু করেন। অনুষ্ঠানের আয়োজকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। যারা অর্থায়নে ছিলেন তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানান ও ভবিষ্যতে এই রকম কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।

তিনি আরও বলেন, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ তারিখে সাভারের বর্ণচ্ছটা রিসোর্টে অনুষ্ঠিত পিকনিকে বকশীগঞ্জ সমিতির নির্বাহী পরিষদ গৃহীত হয়। উক্ত সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নে সবাইকে ভূমিকা রাখতে হবে। এসময় তিনি কিছু দাবী উপস্থাপন করেন। দাবিগুলো হলো: সমিতির জন্য স্থায়ী ঠিকানা ও সমিতির স্থায়ী লোক রাখতে হবে। সমাজ কল্যাণমূলক কাজগুলো আরও বৃদ্ধি করতে হবে।

এরপর সমিতির সহ-সভাপতি ও আজীবন সদস্য-১ এ. এম. মোশাররফ হোসেন তার বক্তব্যে এই সমিতির মাধ্যমে কল্যাণমূলক কাজগুলো অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান।

এরপর বক্তব্য রাখেন সমিতির আইন সম্পাদক এডভোকেট মোহাম্মদ সোহেল রানা আকন্দ। এসময় তিনি বলেন, আমাদের ছাত্রকল্যাণ সমিতিকে পুনরুজ্জীবিত করা উচিত। আমাদের একটা কেন্দ্রীয় ছাত্রকল্যাণ কমিটি থাকবে, সেখান থেকেই বাংলাদেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ সমিতি পরিচালনা করা হবে। দ্বিতীয়ত আমদের যুব কল্যাণ সমিতিকে পুনরুজ্জীবিত করা ও ছাত্র সহায়তা অব্যাহত রাখা দরকার। প্রতিবছর বিসিএস ক্যাডারদের সংবর্ধনার আয়োজন করতে হবে। তৃতীয়ত সমিতির একটা কেন্দ্রীয় ডাটাবেজ করা প্রয়োজন যেখানে এলাকার সকল বিশিষ্ট নাগরিকদের তথ্য থাকবে। সবশেষে তিনি সমিতির একটি স্থায়ী ঠিকানা দরকার বলে গুরুত্বারোপ করেন।

শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বকশীগঞ্জ পৌরসভার সম্মানিত মেয়র আলহাজ্ব নজরুল ইসলাম সওদাগর। এসময় তিনি বলেন, আমি উপস্থিত সকল সম্মানিত আজীবন সদস্যদের বলতে চাই আপনারা বকশীগঞ্জের উন্নয়নের জন্য অনেক কাজ করেছেন, আপনাদেরকে আরো অনেক কাজ করতে হবে। আমাদের বকশীগঞ্জ সমিতির স্থায়ী কোনো অফিস নাই। আমার দাবী হলো আপনারা স্থায়ী একটা অফিস করে দিবেন। আপনারা বকশীগঞ্জের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়নে অনেক কাজ করেছেন। বকশীগঞ্জের উন্নয়নের জন্য আপনারা কাজে আমি বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে যাবো।

মেয়রের বক্তব্যের সাথে একাত্মতা পোষণ করেন বাংলাদেশ সরকারের অতিরিক্ত সচিব ড. গাজী মোঃ সাইফুজ্জামান। তিনি বলেন, আমরা এলাকার মানুষের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি ও রাস্তা-ঘাটের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। এলাকার বিভিন্ন মাদ্রাসায় নিয়মিত আর্থিক অনুদান দিয়ে যাচ্ছি। এসময় তিনি এলাকার বেশ কিছু উন্নয়ন কাজের প্রতিশ্রুতি দেন।

সবশেষে বকশীগঞ্জ সমিতি, ঢাকার একটি স্থায়ী কার্যালয় নির্মাণের উদ্দেশ্যে প্রধান অতিথি কর্তৃক সাড়ে সাত লক্ষ টাকা উত্তোলন করা হয়।

এছাড়াও মতবিনিময় সভায় বকশীগঞ্জ সমিতি, ঢাকার সহ-সভাপতি মোঃ রবিউল ইসলাম, মোঃ আগা সাহিদ মিন্টু, যুগ্ম মহাসচিব মোঃ হারুনুর রশিদ, কাজী আব্দুল মান্নান, ইঞ্জিনিয়ার মোঃ শফিকুল ইসলাম বিদ্যুৎ, সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ সাইফুল ইসলাম মাসুম, মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান বিপ্লব, সাহিত্য সম্পাদক মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান রতন, দপ্তর ও প্রকাশনা সম্পাদক মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন, মহিলা ও শিশু বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট ওয়াহিদা বেগম বেলী, সাংস্কৃতিক সম্পাদক ওয়াহিদা আক্তার সিদ্দিকাসহ সমিতির শতাধিক আজীবন সদস্য উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *