বঙ্গবন্ধু স্কলার হলেন জাবি শিক্ষার্থী মাহবুবা

জাবি প্রতিনিধি

‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্কলার-২০২২’ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থী মাহবুবা বিনতে মোহাম্মদ। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের ৪৬ ব্যাচের (২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষ) শিক্ষার্থী। রোববার (১১ জুন) তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের শাপলা হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেন তিনি।

এর আগে, গত ১৯ মে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের উপ-পরিচালকের দপ্তরের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) আব্দুন নূর মোহম্মদ আল ফিরোজ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে নির্বাচিতদের নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়। বিজয়ীদের হাতে ৩ লাখ টাকা, সনদপত্র ও ক্রেস্ট তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।

গত বছরের আগস্টে পুরস্কারের জন্য উন্মুক্ত আবেদন গ্রহণ করা হয়। শিক্ষার্থীদের আবেদনের পর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে জিপিএ ৫.০০ এবং স্নাতকে সিজিপিএ ৩.৭০ শর্তের ভিত্তিতে আবেদনপত্র বাছাই করা হয়। এর পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের সহশিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ বিবেচনা করা হয়। প্রাথমিক আবেদনের ভিত্তিতে মৌখিক সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে বিজয়ীদের নির্বাচিত করা হয়।

অনুভূতি প্রকাশ করে মাহবুবা বলেন, পুরস্কার প্রাপ্তি ভবিষ্যৎ কর্মপ্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করে। প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পুরস্কার পাওয়া সত্যিই খুব গৌরবের। এ পুরস্কার আমাকে অনেক দূর এগিয়ে যেতে প্রেরণা যোগাবে।

মাহবুবা নরসিংদী আইডিয়াল হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক ও নরসিংদী মডেল কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। তার বাবা নরসিংদী সরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এবং মা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। বাবা-মায়ের অনুপ্রেরণায় এত দূর এসেছেন তিনি। তিন ভাইবোনের মধ্যে মাহবুবা সবার ছোট। তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা গবেষণাকর্মে নিয়োজিত হওয়া।

বাবা-মায়ের অবদানের কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, আমার মা গত ৫ বছর যাবত ডায়ালাইসিস করেন, যেহেতু আমার বোন দেশের বাইরে থাকে আমার মায়ের সম্পূর্ণ দায়িত্ব আমার উপরই। এমনও সময় গেছে যখন আমি আইসিইউ এর বাইরে এসাইনমেন্ট করেছি, টিউটোরিয়ালের আগে হাসপাতালের বেডে বসে পড়েছি, পরের দিন জাস্ট ক্যাম্পাসে এসে পরীক্ষা দিয়েই হসপিটালে ছুটে গেছি।

চোখের পানিতে বই ভাসতো, পড়ার জন্য যে মানসিক অবস্থা থাকার কথা সেটা ছিলো না একদমই। সারাদিন আম্মুর সেবা করে পড়তে বসার শক্তি পেতাম না, তবুও সবসময় চেষ্টা চালিয়ে গেছি। আমি বিশ্বাস করি নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকলে সৃষ্টিকর্তার রহমতে অবশ্যই সবকিছু ব্যালেন্স করা সম্ভব।

আমি মনে করি, জীবন মানে এক ধরনের ব্যালেন্স, পরিবারের প্রতি যেমন দায়িত্ব রয়েছে, নিজের প্রতি ও নিজের দায়িত্ব রয়েছে এবং দুটোকে ব্যালেন্স করেই সামনে এগিয়ে যেতে হয়।

অর্থনৈতিক ভাবে সাবলম্বী হলে আমার ব্যক্তিগতভাবে ইচ্ছে রয়েছে যারা বিশেষ শিশু রয়েছে তাদের নিয়ে কাজ করার। তাদের প্রতি সহমর্মিতা (sympathy) নয় বরং সমমর্মিতা (empathy) প্রদর্শন করা প্রয়োজন।

জীবনে একাডেমিক পড়ালেখা, কো-কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিসে যেমন ভালো করার চেষ্টা করতে হবে তেমনি মানবিকতার চর্চা করার অভ্যাস আমাদের গড়ে তুলতে হবে বলে আমি আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করি।

উল্লেখ্য, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শিক্ষা ও গবেষণা ভাবনায় পরবর্তী প্রজন্মকে উজ্জীবিত করতে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের উদ্যোগে ১৬টি অধিক্ষেত্রে ২২জন অনন্য মেধাবী শিক্ষার্থীে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত করা হয়। এ বছর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্বদ্যিালয়ের ৪ জন শিক্ষার্থী এ পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন। বাকি তিনজন হলে: নিশাত রায়হানা ঈশিতা (রিমোট সেনসিং অ্যান্ড জিআইএস), মুনিয়া তাহসিন (ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ) এবং রুবাইয়াত ইবেন নবী (চারুকলা বিভাগ)। গতবারের আসরে পুরস্কারের জন্য একই ক্যাটাগরিতে নির্বাচিত হয়েছিলেন জাবির দর্শন বিভাগের ৪৪ ব্যাচের শিক্ষার্থী পৃথুলা প্রসুন পূজা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *