জাবির সিনেট নির্বাচনে শিক্ষক ঐক্য পরিষদের ১৩ দফা ইশতেহার

জাবির সিনেট নির্বাচন শিক্ষক ঐক্য পরিষদের ১৩ দফা ইশতেহার

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সিনেটে শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনকে উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের একাংশ ও বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের জোট ‘শিক্ষক ঐক্য পরিষদ’ ১৩ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেছে। রবিবার (৮ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ার শিক্ষক লাউঞ্জে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষক নেতৃবৃন্দ এসব ইশতেহার ঘোষণা করেন।

ইশতেহারগুলো হলো: শিক্ষকদের গবেষণার সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ‘বার্ষিক গবেষণা ফান্ড’ গঠন করে প্রত্যেক শিক্ষকের জন্য গবেষণা খাতে নিয়মিত বরাদ্দ নিশ্চিত করা এবং গবেষণা প্রকল্পসমূহের জন্য বাজেট উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি করা। অস্থায়ী পদে কর্মরত সহকর্মীদেরকে স্থায়ী পদে পদায়ন করা, শিক্ষকদের পদোন্নতি নীতিমালা যুগোপযোগী করা ও শর্ত পূরণের দিন থেকেই স্বীয় পদে স্থায়ীকরণ নিশ্চিত করা। উচ্চ-শিক্ষার্থে বিদেশে অবস্থান করা শিক্ষকদের সকল প্রকার ন্যায্য সুবিধা নিশ্চিত করা। তরুণ শিক্ষকগণের দক্ষতা উন্নয়নে পূর্বের ন্যায় শিক্ষাবৃত্তি প্রচলন। শিক্ষকদের পুস্তক ও গবেষণা ভাতা যৌক্তিক পর্যায়ে বৃদ্ধি করা। সকল বিভাগে প্রয়োজনীয় শ্রেণীকক্ষ ও কর্মরত নবীন শিক্ষকদের কর্মপরিবেশ উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় স্থান সংকুলানসহ আসবাবপত্র ও শিক্ষা সরঞ্জামের ব্যবস্থা করা। অতিসত্বর জীববিজ্ঞান অনুষদ, বাণিজ্য অনুষদ, আইন অনুষদ, আইবিএ ও আইআইটি ভবন নির্মাণে কার্যকর ভূমিকা রাখা এবং বিভিন্ন অনুষদের একাডেমিক ভবনগুলোর অসম্পূর্ণ নির্মাণ কাজ দ্রুত সম্পন্নকরণের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দল-মত নির্বিশেষে সকল শিক্ষার্থীর সহবস্থান নিশ্চিত করা ও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে মাদক সেবন ও মাদক বিপণনের পরিবেশ থেকে মুক্ত করা। নবনির্মিত শিক্ষার্থী হলসহ বিভিন্ন ভবনের উন্নত প্রযুক্তির সরঞ্জাম রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা। কম্পিউটার ক্রয় বাবদ প্রদেয় ঋণ প্রাপ্যতার ক্ষেত্রে শিক্ষকগণের সংখ্যা কয়েক গুণ বৃদ্ধি করা। যথাযথ তদন্ত সাপেক্ষে যৌন নিপীড়নের সকল অভিযোগের নিষ্পত্তি করা। উন্নয়ন প্রকল্প ও সমাবর্তনের আয়-ব্যায়ের হিসাবসহ সকল আর্থিক বিষয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এবং মেয়াদোত্তীর্ণ সকল বিধিবদ্ধ পর্ষদের নির্বাচন সম্পন্ন করা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে নেতৃবৃন্দ বলেন, উপাচার্য চরম উদাসীনতা ও দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছেন। তার মধ্যে অন্যতম কয়েকটি হল: নৈতিক অসচ্চরিত্রতার অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হলেও পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জনাব মাহমুদুর রহমান জনিকে বরখাস্ত না করা, উপাচার্যকে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করার অডিও ভাইরাল হলেও সেই বিষয়ে যাচাই-বাছাই করে জনাব জনির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করা, উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার ক্ষেত্রে অনৈতিকভাবে সাহায্য করেছেন বলে জনাব জনি দাবি করলেও সে বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো বক্তব্য না দেয়া, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগে পরীক্ষা কমিটি গঠনে বিধি লঙ্ঘন করা হলেও সেই বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে বিধিবদ্ধ ব্যবস্থা গ্রহণ না করা, সমাবর্তনের আয়-ব্যায়ের হিসাব না দেয়া, ক্যাম্পাসে দল-মত নির্বিশেষে সকল শিক্ষার্থীর সহাবস্থান নিশ্চিত না করা, প্রশাসনিক গুরুত্বপূর্ণ পদে যোগ্য শিক্ষকগণকে দায়িত্ব প্রদান না করা এবং মেয়াদোত্তীর্ণ সকল বিধিবদ্ধ পর্ষদের নির্বাচন সম্পন্ন না করা।

নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, বহুমাত্রিক অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনায় শিক্ষক মহলে গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। এই অবস্থা পরিবর্তনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের একদেশদর্শী প্রশাসনে ভারসাম্য আনা সময়ের দাবি। তাই ‘শিক্ষক ঐক্য পরিষদ’ যাবতীয় অনিয়ম দূরীকরণ, প্রশাসনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আনয়ন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বস্তরের অংশীজনদের স্বার্থ-সংরক্ষণসহ শিক্ষা ও গবেষণাবান্ধব একটি উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে আওয়ামীপন্থি শিক্ষক সংগঠন ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের শিক্ষক পরিষদের’ আহ্বায়ক অধ্যাপক মোতাহার হোসেন, সদস্য অধ্যাপক সোহেল আহমেদ, বিএনপিপন্থি শিক্ষক অধ্যাপক সৈয়দ মোহাম্মদ কামরুল আহছান, অধ্যাপক শামছুল আলম, অধ্যাপক কামরুল আহসান, অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার, অধ্যাপক মনোয়ার হোসেন, অধ্যাপক আব্দুর রব, অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম, অধ্যাপক আমিনুর রহমান, অধ্যাপক সোহেল রানা, সহযোগী অধ্যাপক মাসুদা পারভীন, সহযোগী অধ্যাপক আমিনা ইসলাম, সহযোগী অধ্যাপক রেজাউল রকিব, সহযোগী অধ্যাপক রায়হান শরীফ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *