যৌন নিপীড়নে অভিযুক্ত শিক্ষককে দায়মুক্তির চেষ্টার প্রতিবাদে জাবিতে বিক্ষোভ

যৌন নিপীড়নে অভিযুক্ত শিক্ষককে দায়মুক্তির চেষ্টার প্রতিবাদে জাবিতে বিক্ষোভ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) বিতর্কিত সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবিরকে ইমেরিটাস অধ্যাপক বানানো এবং নৈতিক স্খলনের দায়ে অভিযুক্ত মাহমুদুর রহমান জনির দায়মুক্তির চেষ্টার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছে শিক্ষার্থীরা।

বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) বেলা সাড়ে তিনটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মুরাদ চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে পরিবহন চত্বর প্রদক্ষিণ শেষে নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।

বিক্ষোভ মিছিলে শিক্ষার্থীদের ‘নিপীড়কের বিরুদ্ধে গড়ে তুলি আন্দোলন’, ‘সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে গড়ে তুলি আন্দোলন’, ‘যে শিক্ষক সন্ত্রাস পোষে সেই শিক্ষক চাই না’, ‘যে শিক্ষক নিপীড়ক সেই শিক্ষক চাই না’, ‘খুনিদের আশ্রয়দাতা ইমেরিটাস অধ্যাপক হতে পারে না’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়।

বিক্ষোভ মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী অমর্ত্য রায়। এসময় অমর্ত্য রায় বলেন, শরীফ এনামুল কবির একজন দুর্নীতিবাজ সাবেক উপাচার্য। দুর্নীতির দায়ে তাকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল। তিনি পদে থাকাকালীন নিজের পছন্দের লোকদেরকে নিয়োগ দিয়েছেন। ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী জোবায়ের হত্যাকারীদের আশ্রয়দাতা ছিলেন সাবেক এই উপাচার্য।

তিনি উপাচার্য থাকা অবস্থায় ক্যাম্পাসে একটা মাৎস্যন্যায় অবস্থা বিরাজ করছিলো। তিনি পুনরায় ইমেরিটাস অধ্যাপক হলে একটা নজির তৈরি হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে প্রথমবার ইমেরিটাস অধ্যাপক হিসেবে শরীফ এনামুল কবিরের মতো একজন বিতর্কিত ব্যক্তির লিগ্যাসি বহন করতে আমরা লজ্জাবোধ করব।

যৌন নিপীড়নের দায়ে অভিযুক্ত শিক্ষক মাহমুদুর রহমান জনির ইস্যুতে তিনি বলেন, নিজ বিভাগের ছাত্রীক যৌন নিপীড়নে অভিযুক্ত শিক্ষক মাহমুদুর রহমান জনিকে দায়মুক্তি দেওয়ার যে অপচেষ্টার কথা আমরা শুনছি সেটা যেনো সত্যি না হয়। তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকের যৌনাচারের যে গুঞ্জন সেটা প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে।

এর আগে শিক্ষার্থীরা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের দাবি দাওয়া দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনকে ধামাচাপা দেওয়ার অভিলাষে দুইজন শিক্ষককে যথাক্রমে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. শরীফ এনামুল কবিরকে আমরা এমিরেটাস অধ্যাপক হিসেবে মেনে নিবোনা (সিন্ডিকেট মেম্বার) এবং যৌন কেলেঙ্কারির দায়ে অভিযুক্ত সহকারী অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান জনিকে মাহমুদুর রহমান জনিকে দায়মুক্তির চেষ্টাও আমরা মেনে নিবোনা। শিক্ষার্থীদের হামলাকারী, মামলাকারী, পিএসসিতে নিয়োগ বোর্ডে থাকাকালীন অনিয়মে অভিযুক্ত অধ্যাপক ড. শরীফ এনামুল কবির এমিরেটাস অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত হলে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক ঘটনা হবে। এরকম বিতর্কিত ব্যক্তিদের আমরা পুনর্বার বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো পদে আসীন দেখতে চাই না।

উল্লেখ্য, অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবির ২০০৯ সাল থেকে প্রায় তিন বছরেরও বেশি সময় উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেন। দায়িত্ব পালনকালে শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম, ছাত্রলীগের ‘একটি অঞ্চলভিত্তিক’ অংশকে মদদ, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে বাধা দেওয়া ছাড়াও নানা অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তার ‘মদদপুষ্ট’ হিসাবে পরিচিত ছাত্রলীগ নেতাদের হামলায় ইংরেজি বিভাগের ছাত্র জুবায়ের আহমেদ নিহত হওয়ার পর তার বিরুদ্ধে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে ওঠে। এরপর ২০১২ সালের ১৭ মে উপাচার্যের পদ ছাড়তে বাধ্য হন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *